Bee Rose যুবতী (ছোট গল্প) Star Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:৪০:৪১ দুপুর



Good Luck "....একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়,

কেউ জানে না।

একেকটি মানুষ নিজের মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়,

হায়, কেউ জানে না !"...

কবি মহাদেব সাহা’র "মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস" এই কবিতাটির এই ক’টি লাইন আমাকে দীর্ঘক্ষণ চুপ করিয়ে রাখল আজ দুপুরবেলায়। একটা নতুন লিখার প্লট এনে দিল নিমিষেই। আমার আশপাশের মানুষগুলো কীভাবে নিজের মধ্যে মরে যাচ্ছে... কি গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়াচ্ছে সেটা একটু করে হলেও উপলব্ধির ইচ্ছেটা জাগল মনে। আমি নিজেও তো সেই মানুষগুলোর একজন। চাকুরির সুবাদে পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ। আমার আশেপাশের চরিত্রগুলোকে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণ করলাম। সেখান থেকেই আজকের প্লটটি তুলে নিলাম।] Good Luck

Roseপ্রতিদিন একই নিয়মে জীবন চলে ওর।

ও মানে সাহানার।

একজন গার্মেন্টস কর্মীর। সুইং অপারেটর এর সহকারী। একেবারে শুরুর দিকের পোষ্ট। একজন হেল্পার সে। যাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর আন্দোলন নিয়ে তুমুল তোলপাড় হয়ে গেলো কিছুদিন পুর্বে... কত ভাংচুর-ধংসযজ্ঞ-হত্যা ঘটে গেল... সব কিছুর নীরব সাক্ষী সেও।

এখন বেতন-ভাতা বাড়ার পরে পরিবেশ অনেক শান্ত।

কোথাও কোনো সমস্যা নেই। সব কিছু ভালোই চলছে। অফিসের লাগোয়া টিনশেড ঝুপড়ি থেকে আইডি কার্ড ও হাজিরা কার্ড নিয়ে বের হতে হতে কথাগুলো ভাবছিল সাহানা।

রংপুরের মেয়ে সে।

এখানে দুলাভাই ও আরো তিন বোনকে নিয়ে থাকে। দুটো রুম নিয়ে ওদের এই অস্থায়ী যৌথ পরিবার। বোনদের ভিতর সাহানা মেঝ।

এবং সব চেয়ে সুন্দরী!

আর এইটাই ওর জন্য কাল হয়েছে।

গরীব মেয়েদের সুন্দর হওয়া একাধারে শাপ এবং পাপ। খারাপ মানুষের নজর থেকে বেঁচে থাকাই তখন দায় হয়ে পড়ে।

বড় বোন ও দুলাভাই একরুমে থাকে। আর ওরা তিন বোন একসাথে অন্য রুমটাতে। সারাদিন ডিউটি করে সেই রাতে বাসায় ফিরে রাতের রান্না করে এতটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে ওরা যে, কে কোথায় কীভাবে বিছানায় ঘুমাল, সেটা দেখারও সময় থাকেনা।

দুলাভাই আকরাম স্টোরের লোডার। মালামাল টেনে উপর-নীচ করতে করতেই ওর সারাদিন কীভাবে যেন কেটে যায়। দুপুরে লাঞ্চে সবাই বাসায় ওরা একত্রীত হয়। তখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে উদরপুর্তির সাথে সাথে নিজেদের ভিতর দু’একটা সুখ দুঃখের আলাপ ছাড়া ছাড়া ভাবে হয়ে থাকে। আর রাতটা বোন-দুলাভাই এর জন্য একটা নির্দিষ্ট রুটীনমাফিক বয়ে চলে। পাশের রুমে তিন কুমারী বোন পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে হাল্কা পার্টিশনের ওপাশের দুই যুবক-যুবতীর প্রাকৃতিক ক্রিয়াটির মৃদু শীৎকার শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে নিজেরাই টের পায় না। ওদের শরীরে কদাচিত সাময়িক যন্ত্রণা অনুভুত হলেও সময়ের সাথে সাথে সেটা তেমন বড় কোনো উপদ্রবের সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে শহরে তাঁরা এসেছে কাজের সন্ধানে... বেঁচে থাকার তাগিদে। সবসময় গ্রামে দু’জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও এক প্রতিবন্ধি ভাই এর মুখ ওদের চারবোনকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরনা যোগায়... শরীরের চাহিদা কিংবা সাময়িক যন্ত্রণা ওদের কাজের থেকে কখনো বড় হয়ে উঠতে পারেনা।

মেইন গেট দিয়ে ঢোকার সময়ে সিকিউরিটি দের লোলুপ দৃষ্টির মাঝ দিয়ে প্রতিদিন সাহানাকে আসতে হয়। সে একটু বেশী সুন্দরী। তাই সবার নজর ওর কমনীয় মুখশ্রীর প্রতি। তবে সেটা একপলকই থাকে। এরপর ওর উন্নত বুকের উপর দৃষ্টির অদৃশ্য হাত বুলিয়ে পুরুষদের ঘোলা চাহনি ওর কলসী আকৃতির পিছনের অংশ ছুঁয়ে আবার নির্লজ্জের মত বুকের উপরে এসে স্থির হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় ঐ চোখগুলোকে তীক্ষ্ণ একটা শলাকা দিয়ে গেলে দেয়। কিন্তু সে তো এতোবড় একটা বিশাল কারখানায় একেবারে নীচু পোষ্টের এক হেল্পার। তাই সব কিছু সহ্য করতে হয়।

এই আজ যেমন পাঞ্চ করে সিড়ি দিয়ে উঠে টাইম সেকশনের চ্যাংড়া ছেলেটার সামনের বক্সে কার্ড জমা দিতে গিয়ে শুনতে হল,

: ‘কিরে, দিন দিন দেখি চেহারা রোশনাই হইতাছে। কি দুলাভাই’র ডোজ পড়তাছে মনে হয়...’

এরপর গা জ্বালানো অশ্লীল ভঙ্গীমার হাসি। এই হাসিটা কথার চেয়েও সাহানাকে বেশী আঘাত করে। আজ সারাটা দিন ওর মনের ভিতরে এই ছেলেটার কথাগুলো হুল ফুটাতে থাকবে। মনে হয় একটা ধারালো ব্লেড দিয়ে ছেলেটার পুরুষাঙ্গটা কেটে দু’ভাগ করে দেয়। মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়... একদিন অবশ্যই সে ওর একটা বিহিত করবেই। একটা গোপন চিন্তা চকিতে এসে মৃদু হাসির রেখা এনে দিলো ওর ঠোঁটের কোণে।

সে একজন নারী। ইচ্ছে করলে এই লোলুপ পুরুষগুলোর একটাকে দিয়ে আর একটাকে শায়েস্তা করা ওর বা হাতের খেলমাত্র। একটা কঠিন চাহনি জোবায়ের নামের টাইমকীপারটির দিকে নিক্ষেপ করে সাহানা সিড়ি ভেঙ্গে চারতলায় ওর ফ্লোরের দিকে উঠতে থাকে। পিছনে কয়েকজনের লালাঝরা দৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই...

সাহানার লাইনের সুপারভাইজারের নাম মিরাজ। এই লোক একটু বয়স্ক। তবে পাজীর একশেষ। কথায় কথায় গালিগালাজ না দিলে তার ভাত হজম হয় না। কথার শুরুটাই হয় এইভাবে, ‘ এই বাইনচোত, এইগুলান কি তোর লাঙ্গে আইসা করবে?’ অথচ ওদের এটা কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরী। বিভিন্ন অডিটের সময় ওদেরকে নিয়ে তোতাপাখীর মত কিছু বুলি শিখানো হয়। ব্যস! ওই পর্যন্তই। অডিটর থাকা পর্যন্ত কেমন একটা মুখোশের আড়ালে থাকে সবাই। চলে গেলে আসল রুপে আবার ফিরে আসা... আবার বাইনচোত... হারমজাদী ইত্যকার সম্ভাষণে নিজেদেরকে সিক্ত করা।

তবে ওদের জেনারেল ম্যানেজার এই দিক থেকে খুব ভালো মানুষ। তার কথা হল কাউকে গালি-গালাজ করা যাবে না। অফিসিয়াল নিয়মে অ্যাকশন নিতে হবে। তবে সেগুলোর ধার কেউই ধারেনা।

এই কারখানায় আজ তিন বছর ধরে আছে ওরা। এর ভিতরে একজনকে ভালোও লেগেছিল। খুব সুদর্শন ছিল ছেলেটা। ওকে কত আশা-প্রলোভন দেখালো... জীবনে প্রথম কাউকে ভালো লেগেছিল সাহানার। ওকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ও দেখেছিল। কিন্তু ছেলেটা যে একটা মাকাল ফল ছিল সে বুঝতেই পারেনি। তার বাইরের রূপ দেখে সে মজলেও, বিয়ের আগেই নিজেকে ছেলেটার হাতে সঁপে দিতে রাজী হয়নি। আর ছেলেটা যখন বুঝল সাহানাকে দিয়ে ওর গোপন বাসনাটা পুরণ হবে না- সে নিজেই সরে গেল। তবে খুব খারাপ ভাবে সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে গেল। একদিন দুপুরবেলায় সবাই লাঞ্চে গেছে। সাহানার শরীরটা খুব খারাপ লাগায় সে ওর মেশিনের নীচে ফ্লোরে শুয়ে ছিল। এই সময় ছেলেটা এলো। এসেই ওর পাশে শুয়ে পড়ল... ওর বুকে হাত দিল... কিস করার চেষ্টা করল। প্রথমে সাহানা নিজের শরীরের যন্ত্রণায় বুঝে উঠতে পারলো না কি হচ্ছে। তবে নিজেকে মুক্ত করার এক দুর্বল চেষ্টা ঠিকই করল। ওর ভাগ্য ভালো ছিল। একজন ক্লীনার কি কারণে যেন এদিকেই আসছিল। সে সব ব্যাপারটা দেখে... ছেলেটাও চুপচাপ মাথা নীচু করে উঠে যায়। তবে ফ্লোরে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকায় আর ক্লীনারটি এডমিনে সকল ঘটনা জানালে সাহানা এবং ছেলেটিকে জিএম স্যারের রুমে যেতে হয়। পুরো ঘটনাটির রেকর্ডকৃত অংশটুকু জিএম স্যার একা আগেই দেখেছিলেন। সাহানাকে চলে যেতে বলে ছেলেটিকে ইনস্ট্যান্ট বিদায় করে দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনাটি একজন থেকে অপরজনের নিকট পৌঁছাতে থাকে... বিভিন্ন ডালপালা গজায়... শেষে খুব খারাপ একটা মিথ্যে কাহিনী তৈরী হয়। সেখানে এই সেক্সুয়াল কর্মটির জন্য সাহানাকেও সমান দোষী বানানো হয়। প্রথম কিছুদিন তো ওর সুপারভাইজারের যন্ত্রনায় সে অস্থির হয়ে পড়ে। একটু কাজের অবসরে সাহানা বিশ্রাম নিচ্ছে দেখলেই মিরাজ এসে হাজির। চোখে মুখে কামনার ভাব ফুটিয়ে বলে, ‘ কি, আমি কি পারিনা নাকি? একবার টেস্ট কৈরা দেখলেও তো পারতি?’ এই কথার কি উত্তর দিবে সে। এমনিতেই এ দেশে মেয়েদের একবার বদনাম হয়ে গেলে তাকে সেই চোখেই দেখা হয়। তার উপর সে তো একজন নারী গার্মেন্টস কর্মী... যাদের জন্ম থেকেই মনে হয় বদনামের দাগ লেগে থাকে।

এভাবে প্রতিটি মুহুর্তই সাহানাদেরকে এই পুরুষশাসিত সমাজে কষ্ট পেতে হচ্ছে। শারীরিক-মানসিক দু’ভাবেই ওরা তিলে তিলে দগ্ধ হচ্ছে। এর থেকে কোনো নিস্তার নেই। একই অবস্থা বিবাহিত মেয়েদের বেলায়ও। পুরুষ সহকর্মীদের ভিতরেও তো যারা এই অশ্লীল মনোভাবের তাদের অধিকাংশই বিবাহিত। তারপরও তাঁরা পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট। সাহানা ভেবে পায়না কেন এই মনোবৃত্তি? এটা কি এই সমাজের অবক্ষয় নয়? একটা সমাজের ভিতরকার উন্নয়নের মাপকাঠি কিন্তু তার সাধারণ জনগণের নৈতিকতার উপরে নির্ভর করে। তবে তার শিক্ষার মান উঁচু না হওয়াতে ওর মত করেই সে এইসব কথাগুলো ভাবছিল।

কাজের ভিতরে কত ভুল-ত্রুটি হয়... সেগুলোর জন্য বকা শুনতে হয়... জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু সেগুলোকে ছাপিয়ে একটা হতাশা সব সময় ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। জীবনে না পাওয়ার বেদনা... গরীব ঘরের মেয়ে হিসাবে জন্ম নেয়াটা ঠিক আছে। সেজন্য ওর কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু নিজেদেরকে একটু সচ্ছল করার জন্য উদয়াস্ত কত পরিশ্রমই না সে করছে। কিন্তু নষ্ট রাজনীতি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের ভারসাম্যহীনতার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধগতির সাথে সাথে বাড়ীওয়ালা নামের এক শ্রেণীর ক্ষাক্কসদের (এরা রাক্ষসদের থেকেও বড়) জন্য কোনোমতে খেয়ে পড়ে জীবন কাটছে ওদের। সবাই মিলে আয় করে আসলে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সঞ্চয় বলতে কিছুই হচ্ছে না। প্রতিবছর যে টাকাটা ইনক্রিমেন্ট হয়, সেই পরিমান (কোনো বছর তার থেকেও বেশী) টাকা তো বাড়ীওয়ালাদেরকে বর্ধিত ঘরভাড়া দিতেই চলে যায়।

আজ ওর চিন্তা রোগে পেয়েছে মনে হয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেবলই মনের গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একটা নতুন বায়ারের স্যাম্পলের কাজ চলছে এই মুহুর্তে ওদের লাইনে। খুব ক্রিটিক্যাল এই স্টাইলটি। আবার কাজে মনোযোগ দিল। এই মেশিন ওদের চার বোনকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিচ্ছে। তাই পারতপক্ষে কাজে ফাঁকি দেয়না সাহানা। এটা সবাই জানলেও ওদের পিএম (প্রোডাকশন ম্যানেজার) স্যার কেন জানি ওকে দেখতে পারে না। সব সময় ফ্লোরে এলে ঘুরে ঘুরে ওর মেশিনের সামনে এসে কিছুক্ষণ বাজ পাখীর দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে চেয়ে কাজ দেখে। ভুল বের করার চেষ্টা করে। আর বড় স্যারেরা যদি চায় তবে একটা না একটা ভুল বের করেই ফেলেন। চোখের কোণ দিয়ে লাইনের মাথায় তাকে দেখতে পেল সাহানা। কাজ দেখতে দেখতে আসছেন তিনি। একসময় ওর সামনে এসে হাজির হবেন... তারপর...

এই লোকের একটা গোপন ইতিহাস আছে ... সেটা একমাত্র সাহানাই জানে। কারণ ইতিহাসটি ওকে ঘিরেই। একটা গা রি রি করা অনুভুতিতে ওর মনটা ছেয়ে গেল। এই পিএম স্যারকে দেখলেই ওর মনটা তিক্ততায় ভরে যায়। মেশিন থামিয়ে স্থির হয়ে যায় সে। অনেক দিন আগের এক রাতে ফিরে যায়...

সেদিন সাহানার ফ্লোরের ওর লাইনসহ তিন লাইনের নাইট শিফট ডিউটি ছিল। এই কারখানায় নাইট হয় রাত বারোটা পর্যন্ত। সেভাবেই কাজ চলছিল। সাড়ে এগারোটার দিকে পিওনকে দিয়ে পিএম স্যার ওকে ডেকে নিলেন। এভাবে প্রায়ই তিনি কাউকে না কাউকে তার রুমে ডেকে নেন। ওনার রুমটা কাঁচের ঘেরা দেয়া নয়। সেগুন কাঠের কাজ করা উঁচু সিলিঙের। কোনো কিছু না ভেবে দরোজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ল। দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে হাল্কা কিছু কাজের কথা বলতে বলতে নিজের চেয়ার ছেড়ে ওর কাছে এসে দাড়ালেন। ওর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিলেন। মধ্যবয়সী এই উঁচু পদের লোকটির উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো না সাহানা। এভাবে তিনি কেন ওকে স্পর্শ করছেন? তবে এরপর যখন তিনি ওর গালে হাত রাখলেন একটু চমকে সে দূরে সরে যেতে চেষ্টা করল। মুখে বলল, ‘কি করছেন স্যার? ছাড়েন আমার হাত।‘ কিন্তু পিএম তখন ধীরে ধিরে পশুতে পরিণত হচ্ছেন। ওর কোমর জড়িয়ে ওকে কাছে টানলেন। জোর করে ওর ঠোঁটে চুমু খেতে চাইলেন। কিছুটা সফল হলেন মনে হয়। তবে সাহানার ধস্তাধস্তিতে ওর শরীরের কোমল কিছু স্পর্শ ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের গ্লাসটা সাহানার হাতের ধাক্কা লেগে ভেঙ্গে ফ্লোরে কয়েক টুকরা হয়ে গেল। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে পিএম এর ধ্যান কিছুটা সরে এলো ওর দিক থেকে। এই সুযোগে সাহানা দ্রুত দরোজা খুলে বের হয়ে এলো। নিজের লাইনের মেশিনের কাছে আসার সময় সাহানার মরে যেতে ইচ্ছে হল। কামুক টাইপের লোকটির শরীরের জান্তব ঘামের ঘ্রাণের সাথে কর্কশ গোফওয়ালা পুরুষালী সিগ্রেটের গন্ধওয়ালা ঠোঁটের পচা একটা স্পর্শ ওর মুখে এবং ঠোঁটে লেগে রয়েছে। কেমন গা গুলিয়ে উঠলো... দ্রুত বেসিনে গিয়ে বমি করল... অনেকক্ষণ ধরে... পিশাচ লোকটার সকল স্পর্শ ওর শরীর থেকে বের করে দিতে চাইল। কিন্তু ওর মনের গভীরে লোকটা যে কদর্য স্মৃতি রেখে দিয়েছে সেটাকে কি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে সে?

পিএম স্যার ওর সামনে এসে এইমাত্র দাঁড়ালেন। একবার ইচ্ছে হল লোকটার পায়ের কাছে থুথু ফেলে। কিন্তু গ্রামের বাড়ীতে ওদের অপেক্ষায় থাকা বৃদ্ধ বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধি ভাই এর মুখ মনে পড়ে গেল... ওর ছোট কুমারী দুই বোনের রাতে ওর পাশে যন্ত্রনায় কষ্ট পাওয়া ছবিটা ভেসে উঠে... ওদের বিয়ে দিতে হবে... নিজেকে বিয়ে করতে হবে... একজন রাজপুত্র না হোক ওর মত কেউ না কেউ তো রয়েছে যার হাতে নিশ্চিন্তে নিজেকে সঁপে দিতে পারবে! তারজন্যও তো কিছুটা সময় এবং সঞ্চয়ের দরকার। আর এখন সময় খুব খারাপ। এই চাকুরীটা চলে গেলে শুধু ওর একার যাবে না। ওদের ৫ জনের চাকুরীই এই বিবাহিত ক্ষমতাধর কামুক লোকটির ইচ্ছেতে চলে যেতে পারে। একবার ভাবে লোকটিকে জিজ্ঞেস করে, ‘ আপনা্রও তো মেয়ে আছে। তার সাথে কেউ আপনার মত করলে কেমন লাগবে?’ কিন্ত অনেক কথাই আছে যেটা মনেই থেকে যায়... আজীবন...সেটা প্রকাশ করা যায় না...

কিছু দীর্ঘশ্বাস আছে যেগুলোকে গোপনেই ছেড়ে দিতে হয়... শব্দ করে নয়।

আর এভাবে প্রতিদিনই কয়েকবার করে সাহানার মত মেয়েদেরকে মরতে হয়... কেউ কি তাদের খবর রাখে?

কার এতো দায় পড়েছে?

কিছু কটু কথা শোনার জন্য নিজেকে মনে মনে তৈরী করে নেয় সে... হাত ও পা যুগপৎ মেশিনে রেখে নিজেও একটি মেশিনে পরিণত হয় মুহুর্তে...

মেশিনের তো আর আঘাত লাগে না!!! Rose

বিষয়: সাহিত্য

১৩৭২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

265775
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৩
ফেরারী মন লিখেছেন : অনেক কথাই আছে যেটা মনেই থেকে যায়... আজীবন... সেটা প্রকাশ করা যায় না... Sad

পড়ে মনটা কিছুটা ব্যথিত হলো। পৃথিবীটা বুঝি এমনই। হাজার সমস্যার মাঝে আমাদের বসবাস। তবুওতো চলতে হবে সামনে যত বাধা আসুক।

আপনার সবগুলো লেখাই পড়ার মত। ভাবি আরো আগে কেনো এলে না! Day Dreaming Day Dreaming
265779
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০২
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যা, আমি নিজেও কিছুটা বিষাদ্গ্রস্ত মানুষ। তাই আমার হৃদয় থেকে আনন্দের পরিমানটা একটু কম বের হয়। এর প্রভাব পড়ছে হয়তো লেখায়ও।
ধন্যবাদ আপনি সাথে রয়েছেন এজন্য। সর্বমোট ১০০টি পোষ্ট এই ব্লগে হবার পরে আমি কিছুদিন বিশ্রাম নিবো।
এরপর আবার নতুনভাবে লেখায় মেতে উঠব ইনশা আল্লাহ।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য। Rose Rose Rose Good Luck
265787
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
কাহাফ লিখেছেন :
মনের গভীরে একে দেয়া কারো স্মৃতি কখনোই ধুয়ে ফেলা যায় না,হোক না তা কদর্য কিংবা অনাবিল সুখের।
দেশের অর্থনীতির চাকা যাদের দ্বারা সচল-এমন মানুষের করুণ অবস্হা সমাজের নৈতিক পচনের দিকেই ইশারা করে।
.......নিজেকেই ধিক্কার জানাই......
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
209539
মামুন লিখেছেন : আপনার মনের দুর্দান্ত অনুভূতি লিখনির দ্বারা অনুপমেয় সৌরভে মুখরিত করে তুলেছে আমার ব্লগ অঙ্গন।
....নিজেকে ধিক্কার জানাই... এই অনুভূতি নিয়ে আসবে পরিবর্তনের ঢেউ- নব-বিপ্লব। সেই অপেক্ষায় রইলাম সবাই।
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
265788
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখিছেন ধন্যবাদ ।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
209540
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা সাথে থাকবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
265800
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৫
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : বলার মত কিছু নাই, কারন এই সমাজের এই সব পুরুষ নামের নরপশুদের জন্য এই সব মেয়েদের এই অবস্থা। এদের বউ মেয়ে এইভাবে কারো না কারো কাছে ধর্ষণ হয় তবে এইটা হইল আধুনিকতা তাই তাদের কেউ কিছু বলে না আর এদের কাছে এদের কোন দাম নাই।
অনেক সুন্দর একটা লেখা লিখছেন, এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫১
209641
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আর ব্লগে সাথে থাকার জন্য অনেক শুভেচ্ছা। আপনার সাথে সহমত।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
265814
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : Pathetic at some point but life related...
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫২
209643
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপু সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।Happy Good Luck
265836
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আপনার লিখার শৈলী পড়েতে পড়তে মনে হয়েছে খেটে খাওয়া অসহায় এক জীবন্ত সাহানাকে দেখেছি এক রাক্ষুকে পুরুষের সাথে ধস্তাধ্বস্তি করে বেচে থাকতে। হৃদয়ে দাগ কাটার মত এভাবে হাজারো সাহানা জীবনের চেয়েও দামি যৌবনকে রক্ষা করতে না পেরে পাড়ি দিয়েছে পরপারে।

ধন্যবাদ। কি বলব। ভারাক্রান্ত হ্রদয়ে আর একটি বেদানাকে নিজের বুকে ধারণ করে বিদায় নিলাম।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
209644
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে দুর্দান্ত মন্তব্যটির জন্য।
আপনার অনুপমেয় অনুভূতির অনবদ্য প্রকাশে আমিও মুগ্ধ হলাম।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ব্লগে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
265867
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪২
সালমা লিখেছেন : আল্লাহ তুমি হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা কর এইসব অসহায় সাহানাদের কে। কত শত সাহানাদের কথা লিখবেন? হাজারো সাহানা রয়েছে যারা প্রতিদিন এমন করে নির্জাতিত হচ্ছে .....আপনার সুন্দর লিখনির জন্য আপনাকে মোবারকবাদ। ভাল থাকুন আর সমাজের অনৈতিক দিক গুলো তুলে ধরুন।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
209664
মামুন লিখেছেন : আপনাকে স্বাগতম আমার ব্লগে!
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
আপনিও ভালো থাকুন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck Good Luck
265884
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : পড়তে পড়তে কষ্টে আষ্টে-পিষ্টে মুচড়ে গেছে মন। সাহানাদের কষ্টগল্পটা অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File